চাঁদপুরে যানজট কমছেই না

admin
1


সিএনজিচালিত অটো ও বিদ্যুতের চার্জে চালিত অটোরিকশার চাপে চাঁদপুর শহরে মানুষের চলাফেরায় নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের প্রধান কয়েকটি সড়কে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। কারণ শহরের মোড়গুলো প্রশস্ত নয় এবং প্রধান সড়কগুলো একেবারেই সরু। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শহরে সিএনজি অটোরিকশা এবং ইজিবাইকের (অটো) কোনো স্ট্যান্ড না থাকা। পৌরসভা থেকে স্ট্যান্ড ইজারা দেওয়া হয়। প্রতিটি গাড়ি থেকে টোলও আদায় করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত কোনো স্ট্যান্ড নেই।

এদিকে শহরে নির্ধারিত কোনো স্ট্যান্ড না থাকার কারণে যেখানে সেখানে ইজিবাইক এবং সিএনজি অটোরিকশা পার্কিং করা হচ্ছে। অদক্ষ ও আনাড়ি চালকরা রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে অটো, সিএনজি। রাস্তার মাঝখানে বা মোড়ে দাঁড়িয়েই যাত্রী উঠানো নামানো চলে। দীর্ঘ যানজটের জন্যে শহরে যানবাহন চলাচলের অব্যবস্থাপনাকেও অনেকে দায়ী করেন। শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক হচ্ছে আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়ক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক, মিজানুর রহমান চৌধুরী সড়ক এবং জেএম সেনগুপ্ত রোড। পুরানবাজার অঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চলসহ শহরের আশপাশ থেকে শহরে আসা- যাওয়ার সড়ক এই চারটি। আর এই চারটি সড়কেই রয়েছে কোথাও চার রাস্তার মোড়, কোথাও পাঁচ রাস্তার মোড়। চারদিক থেকে এবং পাঁচদিক থেকে গাড়ি এসে মোড় অতিক্রম করে। মোড়গুলো এমনিতেই প্রশস্ত নয়, এর সঙ্গে যোগ হয় গাড়ি চালকরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পুরো মোড়জুড়ে শত শত গাড়ির জটলা পাকিয়ে রাখেন। জনসংখ্যা ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সড়কের প্রশস্ততা ও সংখ্যা বাড়েনি।

সড়কের মোড়ে মোড়ে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যে সংস্থার উপর, সে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও ঠিকভাবে সাজানো যাচ্ছে না বলে জানান পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বিপিএম, (বার) এবং এ জেলার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া। পুলিশ সুপার জানান, পুরো জেলার জন্যে ট্রাফিক পুলিশের সৃষ্ট পদ হচ্ছে মাত্র ২৪টি। তারপরও আমি এদিক সেদিক থেকে এনে এই সংখ্যা আরো বাড়িয়ে পুরো জেলায় কোনো রকমে চালাচ্ছি। তাদের দিয়ে অতিরিক্ত ডিউটি করানো হয়। ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর জন্যে আমি হেড কোয়ার্টারে লিখেছি। দেখা যাক কী হয়। তিনি চাঁদপুর শহরে রাস্তা প্রশস্ত করা এবং গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে বাইপাস সড়ক করার কথা বলেন। একইসঙ্গে তিনি শহরে কোনো স্ট্যান্ড না থাকার বিষয়টিও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বলেন। স্ট্যান্ড হলে মোড়ে মোড়ে যানজটের সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা হয় জেলার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, ২০২০ সালে তিনি যখন চাঁদপুর জেলায় যোগদান করেন। তখন এখানে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা ছিল ৭৩ জন। এই সংখ্যা কমে এখন রয়েছে ৪৮ জনে। এদের দিয়ে পুরো জেলা কভার দিতে হচ্ছে।

পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল জানান, আমরা শহরের প্রধান প্রধান মোড়গুলো প্রশস্ত করার কাজ করছি। ইজিবাইকের জন্য নতুন ডিজিটাল নাম্বার প্লেট করেছি, যার দ্বারা অবৈধ গাড়ি চিহ্নিত করা যায়। যারা লাইসেন্স নবায়ন করে নাই এমন ২৮শ’ লাইসেন্স থেকে প্রায় দেড়শ’ লাইসেন্স কমিয়েছি। ডিজিটাল প্লেট সরবরাহের পর অবৈধ গাড়ি রাস্তায় না নামানোর জন্য পৌরসভা থেকে মাইকিং করিয়েছি। তাতে অনেক অবৈধ গাড়ি নিজ থেকেই শহর ছেড়ে চলে গেছে। তারপরও আমরা পৌরসভা থেকে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি আটক করেছি। আবার হয়তো রাস্তায় অবৈধ গাড়ি নামতে পারে। আমরা প্রশাসনের সহায়তায় পুনরায় অভিযান চালাব। ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তার জন্য আমি পৌরসভা থেকে অ্যাপ্রোন পরিহিত কর্মী দিয়েছি। মেয়রের দৃষ্টিতে এখন শহরে যানজটের কারণ হচ্ছে অব্যবস্থাপনা। আমি সহসা পুলিশ সুপার মহোদয়ের সঙ্গে বসব শহরের যানজট নিরসনে করণীয় নির্ধারণ করতে। মেয়র আলাদা অটোস্ট্যান্ড এবং সিএনজিস্ট্যান্ড করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের প্রধান প্রধান মোড়গুলো প্রশস্ত করার কাজও হাতে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে চিত্রলেখা মোড়কে অনেক প্রশস্ত করা হয়েছে। অন্য মোড়গুলোকেও প্রশস্ত করার কাজ চলছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top
;e.readyQueue=[];e.ready=function(